About Me

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, India
আমার জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৫ মার্চ, দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায়। কিন্তু শৈশব-কৈশোর কেটেছে কখনও বাঁকুড়ায়, কখনও উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে। ১৯৭৪-এ আমার প্রথম কবিতা লেখা - 'শত্রু যখন সমস্ত দিক ঘিরে'। আবার এ সময়ই নিকট-মানুষকে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা থেকে লিখে ফেলি আমার প্রথম গান 'বলো ভুলতে কি পারি সাথীদের খুনে রাঙা পথ'। সময়ের অনুভবে জারিত সে সব লেখা। একটার পর একটা কবিতা বা গান লিখেছি তখন তাৎক্ষণিকের প্রয়োজনে। সেই লেখাগুলি নিয়ে আমার প্রথম কবিতার বই 'তোমার মারের পালা শেষ হলে', বার হয় ১৯৮০-তে। এর পর আমার আরও ছ'টি কবিতার বই বার হয়। আর ২০০৯ সালে, এই সাতটি বই একত্রে 'ডানা ঝাপটায় পুরনো পোস্টার' নামে কবিতা সংগ্রহরূপে প্রকাশ পায়। কবিতা লেখার পাশাপাশি গান লেখা, সুর করা আর গান গাওয়া আমার জীবনের অন্যতম অবলম্বন -অন্যতম আনন্দ। ১৯৮১ সাল থেকে 'অনুশ্রী-বিপুল' এই জুটি হিসেবে কলকাতা মহানগরী থেকে বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে গান গেয়েছি - গান গেয়ে চলেছি। এ পর্যন্ত মোট সাতটি ক্যাসেট/সিডিতে সে গান প্রকাশিত। আমার গানে-কবিতায় আমি চাই সময়কে ধরতে। সময় পেরিয়ে নতুন সময়কে আবিষ্কার করতে। রিকশা চালায় যে শিশু তার অসহায়তা-বেদনাকে আমার সৃষ্টিতে যেমন ধরতে চাই তেমনি ছুঁয়ে থাকতে চাই আকাশের শেষ তারাটিকেও। জানি না সে কাজ পেরেছি কিনা - পারবো কিনা। সেই অভিমুখে - জীবনের কাছে সত্যবদ্ধ থেকে, যোগ্য শব্দ ও সুরের সন্ধানে আমার অভিযাত্রা।

Saturday, July 17, 2010

অনেক তারার অন্ধকারে

ছেলেবেলায় একবার বাবার সঙ্গে বেরিয়ে, মাঠের মধ্য দিয়ে পথ হাঁটতে হাঁটতে অকারণে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আমরা কোথায় যাচ্ছি, বাবা? বাবা বলেছিলেন- ওই দূরে। -- ওই দূরে মানে কত দূরে? -- ওই দূরে মানে ও-ও-ওই দূরেআর কিছু না বলে, চোখ চেয়ে দেখেছিলাম, সামনে শুধু মাঠ আর মাঠ আর মাঠমাঠে মাঠে বাতাসের স্বরে বহে যাওয়া ফসলের কান্নাআর তারও পরে, দূরের আকাশে একটি তারা মিটমিট করে জ্বলছেএসবের মাঝে কেমন যেন ভয় হয়েছিলশিউরে উঠে বাবাকে বলেছিলাম- না না, আমি যাব নাএখনই বাড়ি ফিরে চল। -- আচ্ছা বেশ, তা-ই চলআজ এই অবধিই থাকআরেকদিন, না হয় আরেকদিন যাওয়া যাবে

তারপর একদিন বাবা চলে গেলেনএকা একাআমাকে সঙ্গে নেননিবলেও যাননি কিছু

বন্ধুদের সঙ্গে, এরপর, কবে যে মেলালাম নিজেকেকীভাবে যে মেলালামবন্ধুরা একসঙ্গে কতবার মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে যেতে যেতে গান গেয়েছি - 'আর দূর নেই দিগন্তের আর দূর নেই' সবাই মিলে থাকায় এই উচ্চারণে ভয় হয়নি একটুওফসলের স্বরকেও এ সময় মনে হয়েছে আমাদের সঙ্গে, গান গাইছেকিন্তু বাবাকে মনে পড়তেই চোখ চেয়ে দেখেছি দূরে, তেমনিii দূরেই সেই আকাশ আর সেই তারা মিটমিট করে জ্বলছে

দিনগুলি গড়িয়ে চলেছেআমাদের কত যে গল্প, কত কথা, আমাদের গাওয়া গানগুলি গড়িয়ে চলেছে

আজ, সন্তানের হাত ধরে পথ হাঁটতে হাঁটতে এই ভুবনডাঙ্গার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবি, সে যদি জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি আমরা, কী বলব তাকে? বলব কি ওই দূরে ওই তারাটির কাছে! আমার বাবা কি আমাকে সে কথাই বলতে চেয়েছিলেন! তিনি কি সত্যিই ওই তারাটির কাছে এতদিনে পৌঁছে গিয়েছেন! বন্ধুরাই বা কী বলতে চেয়েছে গানে গানে, কী বলতে চায়! আমার সন্তানকে কী বলব? আমার বাবার মত একা-একাই সেখানে যেতে হয়, নাকি বন্ধুরা মিলে সবাই মিলে একদিন সেখানে যেতে হবে! যেতে হবে একটি তারাকে পেরিয়ে আরও আরও তারার দিকে!

দূরে, তেমনি দূরেই সেই আকাশ আর সেই তারা মিটমিট করে জ্বলছে


প্রকাশ : 'ছাতিমতলা', সংকলন-১৮, কার্তিক ১৪০০, অক্টোবর ১৯৯৩



Thursday, July 15, 2010

রাত্রিজল ছুঁয়ে জেগে আছি

রাত্রিজল ছুঁয়ে জেগে আছি

নক্ষত্রমালার দেশ আরও
দূর থেকে ক্রমাগত দূরে

রাত্রিজল, বেহুলা-ভাসান

বহে যায় বাংলা কবিতা
বাংলার শব ও শালুক

প্রবেশক কবিতা,'রাত্রিজল ছুঁয়ে জেগে আছি', প্রকাশকাল : জানুয়ারি ১৯৯০